আমার কথা
খুব ছোট থেকে আনমনে গুন গুনিয়ে গান করতাম। বাবা-মা’র কাছ থেকেই প্রথম অনুপ্রেরণা পায়। যখন কিছুটা বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই ইচ্ছে সঙ্গীত চর্চা’র। বাকি টুকু বাবা-মা’র ইচ্ছে থেকে এ জগতের সিড়িতে পা রাখা। শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ বাবলু খন্দকার আমার সঙ্গীত জীবনের হাতেখড়ি। তিনি তখন গাইবান্ধা’র সুরবাণী সঙ্গীত একাডেমী’র সন্মানিত শিক্ষক। তারপর চাকুরী সূত্রে আমার বাবা রংপুরে বদলী হয়ে যায়। সেখানে ওস্তাদ আকবর হোসেন ও ছোটদের বড়দের সকলের বিখ্যাত গানের ওস্তাদ খাদেমূল ইসলাম বসুনিয়া’র কাছে প্রায় ৭ বছর গানের তালিম নেওয়ার সৌভাগ্য হয়। তারপর ১৯৯০ সালে রংপুর বেতার কেন্দ্রে শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। আমার প্রথম এ্যালবাম সংগীতা’র ব্যানারে রকিবুল ইসলামের কথা ও সুরে ‘প্রেম ভরা চোখে’। মিউজিক কম্পোজিশনে ছিলেন আশিকুজ্জামান টুলু। বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার গান গাওয়ার সুযোগ হয় ১৯৯২ সালে। তারপর থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করছি এবং বর্তমানে আমি একজন বিশেষ গ্রেডের শিল্পী হিসেবে গান করে যাচ্ছি। প্রয়াত বিশিষ্ট সুরুকার প্রণব ঘোষের সুরে আমার দ্বিতীয় এ্যালবাম বাজারে আসে ১৯৯৮ সালে। সাউন্ডেটেকে’র ব্যানারে ফোক ও আধুনিক গান সমৃদ্ধ এ্যালবামটি’র শিরোনাম ছিল ‘রসিয়া কালা’। গীতিকার ছিলেন প্রয়াত কথা শিল্পী কামরুজ্জামান কাজল, বাকিউল আলম, মিলন খান, প্রসেনজিত।
২০০০ সালে আমি যখন ঢাকায় আসি তখন প্রথমে ওস্তাদ প্রয়াত আক্তার সাদমানি’র কাছে এক বছর এবং ওস্তাদ সঞ্জীদ দে’র কাছ থেকে প্রায় ৫ বৎসর তালিম নিই এবং ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত চর্চার সুযোগ হয়। ঢাকায় আসার পর আমার ৩য় মিক্সড এ্যালবাম কবির বকুল ও লিটন অধিকারী রিন্টু’র সুরে ‘শাড়ির আচল’ প্রকাশ পায় সাউন্ডটেকের ব্যানারে। সংগীতে ছিলেন সজল দাস। ২০০৩ সালে ‘স্বপ্ন প্রহর’ নামে একটি এ্যালবাম বাজারে আসে। সুর ও সংগীতে মান্নান মোহাম্মদ, কথায় প্রয়াত কামরুজ্জামান কাজল, মিঠু হাসান, দেলোয়ার আরজুদা শরফ, সাব্বির হোসেন, আয়েশা তিথি। এটিও ছিল সাউন্ডটেকে’র ব্যানারে। তারপর একটি ডুয়েট এ্যালবাম করি। শিরোনাম ছিল ‘কেড়ে নিতে চাই মনটা তোমার’। সুর ও সংগীতে আলাল ওয়ারীদ। কথায় প্রয়াত কামরুজ্জামান কাজল, আক্তারুজ্জামান বাবুল, প্রয়াত ওবায়দুল্লাহ। ২০০৬ সালে প্রকাশিত এ্যালবামটি’তে আমার লেখা বেশ কিছু গানও প্রকাশিত হয়। এ যাবৎকাল সংগীতের আমার সর্বশেষ এ্যালবামটি দেশাত্বাবোধক গানের উপর। গানগুলো লিখেছেন প্রসেনজিত এবং আমি স্বয়ং। সংগীতে আহমেদ ফরিদ, দেবা ও রাজু আহমেদ। এ্যালবাম টি’র শিরোনাম ‘বাংলা আমার প্রথম সকাল’। এটি রিলিজ হয় ২০১১ সালে।
রাজধানী’র এত ব্যস্ততম যাপিত জীবনে অনেক কষ্টে কুড়িয়ে কিছু সময় বের করার চেষ্টা করি আমার সংগীত সাধনা’র জন্য। প্রতিদিন বেশ কিছু সময় সংগীত চর্চা করি। নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে গান করার চেষ্টা করি। সময় যখনই পাই ততক্ষন গান শুনি। গান নিয়ে আমার চিন্তা শ্রোতাদের আমার আবহামান বাংলা সংস্কৃতি বোধের সঠিক সুধা পান করানো। তথ্য প্রযুক্তি’র এ যুগে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে শ্রেুাতাদের জন্যে আমার সর্বশেষ সংকলন গুলো নিয়মিত আপডেট থাকবে আশা রাখি। একজন শিল্পী’র সবচেয়ে বড় চাওয়া থাকে একজন শ্রুোতার কাছেই। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকি ‘সবার জন্যে’ গান করে যাবো এই কামনা। ব্যক্তি জীবনে আমাকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক বড় একটা সময় দিতে হয়। বর্তমানে আমি রংপুর গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছি। আমার স্বামীও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। যার অনুপ্রেরণায় আমার লালিত স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করতে এ পর্যন্ত আসা। আমাদের একজন কন্যা ও একজন পুত্র সন্তান রয়েছে। শ্রোতাদের নিকট আমার চাওয়া গান শুনুন, সঠিক ও শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা করুন এবং দেশকে ভালবাসুন।